কিডনি বেচাকেনায় ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতাল, টার্গেট মিয়ানমার

শেয়ার করুন:

কিডনি

ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতাল। এশিয়াজুড়ে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা ব্যবসা। গর্ব করে বলে, তারা বছরে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে। যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্ব থেকে ধনী রোগীরা তাদের কাছে আসে অস্ত্রোপচারের জন্য।

ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়ংকর তথ্য। চিকিৎসার মতো ‘মহান’ সেবা বাণিজ্যের আড়ালে কিডনি ব্যবসার বৈশ্বিক চক্রে জড়িয়ে গেছে এই হাসপাতাল। অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ধনী রোগীদের কাছে অঙ্গ বিক্রি করছেন মিয়ানমারের দরিদ্র তরুণ-যুবকেরা।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতাল গ্রুপটি ‘কিডনির বিনিময়ে টাকা’ লেনদেনের একটি অপরাধী চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। তারা মিয়ানমারের দরিদ্র মানুষদের মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করছে।

ভারতে অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ বেচাকেনা বেআইনি। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এমন আইন আছে। টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মিয়ানমার থেকে দরিদ্র গ্রামীণ যুবকদের অ্যাপোলোর মর্যাদাপূর্ণ দিল্লি হাসপাতালে আনা হচ্ছে। মিয়ানমারেরই ধনী রোগীদের তাঁরা কিডনি দান করছেন। বিনিময়ে টাকা দেওয়া হচ্ছে।

অ্যাপোলোর ফ্ল্যাগশিপ ইন্দ্রপস্থ হাসপাতাল।
অ্যাপোলোর ফ্ল্যাগশিপ ইন্দ্রপস্থ হাসপাতাল। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফের সৌজন্যে
এই চক্রের একজন এজেন্ট টেলিগ্রাফের প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘এটি বড় ব্যবসা। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দুই দেশের সরকারের মধ্যে এ-সংক্রান্ত বাধাগুলো অপসারণে যোগসাজশে কাজ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব সময় সরকারকে মিথ্যা তথ্য দেয়।’

কিডনি বেচাকেনার পুরো প্রক্রিয়াটিতে অনেকগুলো ধাপে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়। পরিচয় সম্পর্কিত নথি জাল করা হয়। দাতাকে রোগীর আত্মীয় হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য পারিবারিক ছবি মঞ্চায়িত করা হয়। যেখানে ভারত এবং মিয়ানমারের আইন অনুসারে, একজন রোগী স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে অঙ্গ নিতে পারেন না।

অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা তথ্য দেখে তারা হতবাক হয়েছে। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করবেন বলেও জানিয়েছে তারা। কর্তৃপক্ষ বলেছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো বেআইনি কার্যকলাপের জন্য আমাদের ইচ্ছাকৃত জটিলতা বা গোপন অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় সার্জনদের একজন ডা. সন্দীপ গুলেরিয়া। তিনি যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং চিকিৎসা সেবার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পেয়েছেন। রোগী এবং এজেন্টরা কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার পরিচালনাকারী সার্জন হিসেবে তাঁর নাম বলেছেন।

তবে ডা. সন্দীপ বলেছেন, টেলিগ্রাফ যেসব তথ্য অনুসন্ধানে পেয়েছে তা তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। তা ছাড়া এসব দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গ প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত করাটা ‘আপত্তিকর এবং হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন ডা. সন্দীপ।

অ্যাপোলো হাসপাতালের সার্জন ডা. সন্দীপ ভারতের পদ্মশ্রী পদক পেয়েছেন।
অ্যাপোলো হাসপাতালের সার্জন ডা. সন্দীপ ভারতের পদ্মশ্রী পদক পেয়েছেন। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফের সৌজন্যে
অথচ ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য ডেকান হেরাল্ডে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপোলোর দিল্লি হাসপাতালের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কিডনি কেলেঙ্কারির ঘটনায় ডা. সন্দীপকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে। ওই প্রতিবেদনকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এই সম্মানিত চিকিৎসক।

‘কিডনির বিনিময়ে নগদ টাকা’ এই চক্র সম্পর্কে টেলিগ্রাফ প্রথম জানতে পারে দাও সো সোয়ে নামে ৫৮ বছর বয়সী এক রোগী যখন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি কিডনির জন্য ৮০ লাখ মিয়ানমার কিয়াত বা প্রায় ৩৯ হাজার ডলার খরচ করেন।

তাঁর চিকিৎসার নথিপত্রে দেখা যায়, দিল্লিতে অ্যাপোলোর ফ্ল্যাগশিপ হাসপাতাল ইন্দ্রপ্রস্থ হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর কিডনি দাতা ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত।

এই রোগী টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘আমি জানি যে, মিয়ানমার এবং ভারতের আইনে অপরিচিত ব্যক্তির অঙ্গ দান করার অনুমতি নেই। কিন্তু যেহেতু আমরা মিয়ানমারে আছি, তাই এজেন্ট আমাদের আত্মীয় বলে ভুয়া গল্প বলতে শিখিয়েছিল।’

Leave a Comment

Leave a Comment

এ সংক্রান্ত আরও